IF LIKE OUR NEWS.PLS LIKE US OUR SIDEBAR FACEBOOK PAGE.

3/3/12

এই গাড়িটা মায়ের

পরের সংবাদ» সাকিব আল হাসান সাকিব আল হাসান bangladesh blog

থেকে জানানো হলো, এবারের কলামটার সঙ্গে নাকি বিপিএলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে পাওয়া গাড়িটার বড় একটা ছবি ছাপা হবে। কলামে এই গাড়ি পাওয়ার অনুভূতিটা বিস্তারিত বলার অনুরোধও পেলাম। কিন্তু শুরুতেই নিজের প্রাপ্তি নিয়ে কথা বলতে কেমন যেন লাগছে! গাড়ির প্রসঙ্গে পরে আসি, আগে বিপিএলটা আমার কেমন লাগল, সেটি বলি। পেছন ফিরে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, ঝড়ের মতো চলে গেল টুর্নামেন্টটা! এই সেদিন নিলাম হলো, কদিন পরই খেলা শুরু হয়ে গেল, হয়ে গেল শেষও। একটু তাড়াহুড়ো করেই টুর্নামেন্টটা আয়োজন করা হয়েছে বলে মাঠের বাইরে একটু অব্যবস্থাপনা হয়তো ছিল। তবে সব কিছু মিলিয়ে আমি এটিকে সফল আয়োজনই বলব। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মাঠের খেলাটা। সেটি ভালোই হয়েছে, আমার ধারণা। দর্শকেরা যা চেয়েছে, তা-ই পেয়েছে। খেলার মানের কথা বললে আমি বলব, বিশ্বমানের টি-টোয়েন্টিই হয়েছে। আইপিএলের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য আছে বলেও আমার মনে হয়নি। শুরুর দিকে মাঠে খুব একটা বেশি দর্শক হয়নি। এর বড় কারণ ছিল, টিকিটের উচ্চমূল্য। টিকিটের দাম কমানোর পর অবশ্য দর্শক বেড়েছে। সেমিফাইনাল আর ফাইনালের দিন তো মাঠ ভরাই ছিল। ফাইনালটা একটু একতরফা হয়ে গেছে, তবে সেমিফাইনাল দুটি দর্শকদের পয়সা উশুল করে দিয়েছে। এর বাইরেও বেশ কিছু ম্যাচ ভালো হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে শেষটা উত্তেজনাকর হওয়া খুব জরুরি—সেটি হয়েছে। একটা আক্ষেপ অবশ্য আছে, বাংলাদেশের আরও কিছু তরুণ খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেলে আরও বেশি ভালো লাগত। সেটি হয়নি, কারণ প্রতি দলেই পাঁচজন করে বিদেশি খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেয়েছে। এর সঙ্গে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা যোগ হওয়ার পর খুব বেশি জায়গা খালি ছিল না। স্থানীয় খেলোয়াড়েরা ভালোই করেছে। বিশেষ করে বোলিংয়ে বাংলাদেশের স্পিনাররা তো খুবই ভালো করেছে। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছে যে দুজন, এর মধ্যে একজন বাংলাদেশের স্পিনার। পেসারদেরও অনেকে ভালো করেছে। যদিও সব দলই কমপক্ষে একজন করে বিদেশি পেসার ও পেসার-অলরাউন্ডার নিয়েছে বলে স্থানীয় পেসারদের সুযোগটা কম ছিল। ব্যাটিংয়ে বিদেশিদের দাপটই বেশি ছিল। সেটির কারণ হলো, টপ অর্ডারে মূলত বিদেশিরাই খেলেছে। আমার দলেই তো এক থেকে চার পর্যন্ত, বলতে গেলে বিদেশিরাই খেলেছে। টি-টোয়েন্টিতে মিডল অর্ডারে খেলে বড় কিছু করা খুব কঠিন। পাঁচজন করে বিদেশি খেলানোর সুযোগ দেওয়াটা ঠিক হয়েছে কি না, এই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন। আমি বলব, বিপিএলের প্রথম আসর হিসেবে সিদ্ধান্তটা ঠিকই আছে। এত বিদেশি খেলোয়াড় না এলে হাইপ তৈরি হতো না। টুর্নামেন্টটাও জমত না। কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। এর মধ্যে খেলোয়াড়েরা প্রতিশ্রুতিমতো টাকা-পয়সা পাবে কি না, এ নিয়েও কথা হচ্ছে। আমি আশা করি এবং বিশ্বাসও করি, সবাই সবার টাকা পেয়ে যাবে। হয়তো একটু আগে-পরে হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্যও তো ব্যাপারটা নতুন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা দল কিনেছে। গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগতেই পারে। স্পট ফিক্সিং নিয়েও অনেক শোরগোল হলো বিপিএলে। এটা ক্রিকেটের একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত এই বিষ থেকে মুক্তির দায়িত্ব ক্রিকেটারদেরই। কোনো খেলোয়াড় যদি এমন কিছু করতে না চায়, তাহলে কেউ জোর করে তাকে এতে জড়াতে পারবে না। আর কোনো খেলোয়াড় যদি অসৎ হয়, তাহলে আপনি যত পাহারাই বসান না কেন, কাজ হবে না। সব কিছুর পর গুরুত্বপূর্ণ তাই খেলোয়াড়দের সততা। এবার গাড়ি প্রসঙ্গে আসি। ফাইনাল আমি মাঠে দেখিনি, বাসায় টিভিতে দেখেছি। তো বোর্ড সভাপতির একান্ত সহকারীর ফোন পেলাম, তুমি তো গাড়ি পাচ্ছ। মাঠে আসবে না? আমার বাসা তো মাঠের খুব কাছেই, চলে এলাম। খুব যে খুশি হয়েছি, এটা বোধ হয় না বললেও চলে। পুরস্কার হিসেবে গাড়ি এই প্রথম পেলাম। তবে এর চেয়েও বেশি খুশি হয়েছি, যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো, তখন দর্শকদের খুশি দেখে। তখন কিন্তু আর আমি খুলনার কি না, এটা কেউ মনে রাখেনি। সবাই হাততালি দিয়েছে আমি বাংলাদেশের কেউ বেস্ট প্লেয়ার হয়েছে বলে। অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে, গাড়িটা জেতার কোনো টার্গেট আমার ছিল কি না। সত্যি বলছি, প্রথম পাঁচ-ছয়টা ম্যাচে এ নিয়ে ভাবিইনি। তবে একসময় যখন আমার সবচেয়ে বেশি উইকেট ছিল, মোটামুটি রানও করছিলাম, তখন মাথায় এসেছে এভাবে খেললে হয়তো গাড়িটা পেয়ে যাব, পেয়েও গেলাম। আমার একটা টয়োটা ও একটা নিশান গাড়ি ছিল, নতুন হোন্ডা কারটা মাকে দিয়ে দেব ঠিক করেছি। গাড়ি পাওয়ার পর মা ফোন করে বললেন, আমি একজন ড্রাইভার রাখছি, এই গাড়িটা আমার। আমিও মনে মনে এটাই ঠিক করে রেখেছিলাম। মাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, সেটা আর হলো না। আফসোস!

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More